মৌমাছি যেভাবে গনিতের ব্যবহার করে

মৌমাছি যেভাবে গনিতের ব্যবহার করে 

মৌমাছি যেভাবে গনিতের ব্যবহার করে
Image souorce: IFLScience

প্রকৃতিতে মৌমাছির অবদান কতখানি, তা কম বেশি আমরা সকলেই জানি। বলা হয়ে থাকে মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রাণীকুল বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে আজ আমরা সেসব আলোচনায় যাব না। আমরা আজ জানব এই ক্ষুদ্র পতঙ্গটির গণিত প্রতিভা সম্পর্কে, দেখব দৈনন্দিন জীবনে তারা কিভাবে গণিতের ব্যবহার করে থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে মৌমাছিরা পাটিগণিতের সাধারণ কিছু ব্যাবহার এবং হিসাব নিকাশ করতে জানে। তাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও খুব সহজেই তারা যোগ বিয়োগের মত গাণিতিক হিসাব করতে পারে। গবেষণা মতে তাদের মস্তিষ্কে মাত্র ১ মিলিয়ন নিউরন আছে, যেখানে মানুষের মস্তিষ্কে নিউরন থাকে প্রায় ৮৬০০০ মিলিয়ন। তবুও তারা তাদের বিভিন্ন কাজকর্মে অনায়াসেই গণিতের ব্যাবহার করতে সক্ষম। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষকের মতে, তারা এমনকি শূন্যের ধারণাটিও জানে।

মৌমাছি যে যোগ বিয়োগের মত সাধারণ পাটিগণিতের নিয়মগুলো শিখতে পারে তা বোঝার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় RMIT বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একদল গবেষক একটি পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার জন্য তারা ১৪ টি মৌমাছি ব্যবহার করেন এবং তাদের Y আকৃতির একটি মেইজ বা গোলকধাঁধা এর মধ্যে বিশেষভাবে ট্রেনিং দেন। এই ট্রেনিং এর জন্য মেইজটিতে দুটি রঙ এর এক থেকে পাঁচ টি আকৃতি ব্যবহার করা হত। আর রঙ দুটি ছিল হলুদ এবং নীল। গবেষকরা চেয়েছিলেন মৌমাছিগুলো হলুদ রঙ কে বিয়োগ এবং নীল রঙ কে যোগ হিসাবে বিবেচনা করুক। এবার নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন-

Image source: Science Advance

চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিটি মৌমাছি কে যখন মেইজটিতে ঢুকানো হচ্ছে তাদের একটি নীল অথবা হলুদ রঙ এর কিছু আকৃতি দেখানো হচ্ছে। প্রবেশের পর তারা ডানে ও বামে দুটি রাস্তা পাবে। দুটি রাস্তার সামনেই একই রঙ এর কয়েকটি আকৃতি রয়েছে। এখন যেহেতু গবেষক দল চেয়েছিলেন যে তারা হলুদ রঙ কে বিয়োগ এবং নীল রঙ কে যোগ হিসাবে বিবেচনা করুক, তাই তাদের এটি শেখানোর জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়। হলুদ ঘরের জন্য যারা পরের ধাপে প্রবেশ পথের চেয়ে একটি কম আকৃতি বিশিষ্ট পথে (যেহেতু হলুদ হল বিয়োগ বা ৩-১=২) প্রবেশ করত তাদের জন্য পুরস্কার হিসাবে ছিল চিনি মিশ্রিত পানি। আর যারা অন্য পথটি বেছে নিত তাদের খেতে দেওয়া হত তেতো একটি দ্রবণ।

একই ভাবে নীল রঙ এর মেইজ টির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপে যারা প্রবেশ পথের আকৃতির চেয়ে একটি আকৃতি বেশি বিশিষ্ট ঘরে প্রবেশ করত (যেহেতু নীল হল যোগ বা ৩+১=৪), তাদের পুরস্কৃত করা হত। এভাবে মৌমাছিগুলোকে 4-7 ঘণ্টা ট্রেনিং দেওয়া হয় এবং শেষে দুটি ভিন্ন পদ্ধতি তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। দেখা যায় যে ৬০-৭৫ শতাংশ সময় তারা সঠিকভাবে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হচ্ছে।

যদিও এটি বলা ঠিক হবে না যে এই পরীক্ষা প্রমাণ করে যে মৌমাছি গনিতে খুবই পারদর্শী। তবে এটা বলা যায় যে গণিত শিখতে তারা বেশ দক্ষ।


মৌমাছির গণিত ব্যবহারের কিছু উদাহরণ

মৌমাছি যে গণিতের ব্যবহার জানে তা হয়তো আমাদের অনেকের বিশ্বাস নাও হতে পারে। তাই কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক। এই উদাহরণগুলো দেখলে কিছুটা হলেও বোঝা যাবে কত জটিল গাণিতিক হিসাব তারা অনায়াসেই করে ফেলতে পারে।

১। লক্ষ করে দেখবেন মৌমাছির চাকে ক্ষুদ্র ঘরগুলো সুষম ষড়ভুজাকৃতির হয়ে থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি ঘরের বাহু সংখ্যা ছয় এবং বাহুগুলো পরস্পর সমান। ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও কাকতালীয় নয়। একমাত্র ষড়ভুজ আকৃতিতেই আপনি সবচেয়ে কম জায়গায় অপচয় করে অধিক সংখ্যক ক্ষেত্র স্থাপন করতে পারবেন। কাজেই ছোট একটি চাকে শত শত মৌমাছি থাকার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত আকৃতির ঘর আর কোনভাবেই তৈরি করা সম্ভব না। আর সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপারটি হল, এই আকৃতির জন্য মৌচাক তৈরি করতে তাদের সবচেয়ে কম মোম খরচ করতে হয়।

২। তারা খুব সহজেই "ট্রাভেলিং সেলসম্যান সমস্যা" র সমাধান করতে পারে। এর অর্থ হল এরা খুব সহজেই দুটি নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্বের ও সুবিধাজনক পথটি খুঁজে বের করতে পারে।

৩। সবচেয়ে চমকপ্রদ গণিতের যে ব্যাবহারটি মৌমাছি করে থাকে তা জানলে আমাদের বিস্ময়ের সীমা থাকবে না, আর সেটি হল ভেক্টরের ব্যাবহার। হ্যাঁ, ভেক্টর গণিতের মত জটিল বিষয় নিয়েও তাদের বেশ দক্ষতা আছে। যেমন ধরুন কোন মৌমাছি যদি নির্দিষ্ট কোন স্থানে ভাল মধুর সন্ধান পেয়ে থাকে তাহলে সে চাকে ফিরে এসে বাকি মৌমাছিদের খবর দেয়। শুধু খবর দেওয়াই নয়, সেই সাথে কোন দিকে কত দুরে গেলে ওই নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়া যাবে তার খুঁটিনাটি এক অদ্ভুত নৃত্যের মাধ্যমে বাকিদের বুঝিয়ে দেয়।

এরকম হয়তো আরও অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে যেসব ক্ষেত্রে মৌমাছির গণিত ব্যবহারের উদাহরণ পাওয়া যাবে।

তবে এমন নয় যে মানুষ বাদে প্রকৃতিতে মৌমাছি ছাড়া অন্য কোন প্রাণী গণিতের ব্যাবহার করে না। আরও অনেক প্রাণী আছে যারা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে গণিতের অনেক ব্যাবহার করে থাকে। তবে এটি স্পষ্ট যে এসব প্রাণীদের মধ্যে মৌমাছি তুলনামূলক-ভাবে গনিতে বেশি পারদর্শী।

কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান 

References

HONEY BEES CAN SOLVE MATH EQUATIONS BETTER THAN MANY HUMANS CAN, STUDY FINDS
Bees Can Solve Math Problems That Would Stump the Average Toddle
Buzzworthy news: Are bees better at math than you are?
Honey Bees Can Do Simple Math, After a Little Schooling
Honeybees can do maths
The Mysterious Connection between Honey Bees and Mathematics

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ