শীতের ঘন কুয়াশা । ছবিঃ Vit Kovalcik |
ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। একেক ঋতু তার স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ যেমন এ ঋতুর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য তেমনি বর্ষার রয়েছে অনবরত বৃষ্টিপাত। আর শীতের কথা মাথায় এলেই আমাদের সর্বপ্রথম যে কথাটি মাথায় আসে তা হল হাড় কাঁপানো শীত। তবে সেই সাথে আরও একটি ব্যাপার আমাদের কাছে শীতকালের অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে হাজির হয়। আর তা হল "কুয়াশা" বা "Fog"।
শীত আসতে না আসতেই প্রকৃতিতে আমরা কুয়াশার অস্তিত্ব টের পাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা পড়ন্ত বিকাল থেকে শুর করে আকাশ কুয়াশায় ঢেকে যেতে দেখেছি আমরা। কখনো হালকা কুয়াশার চাদরে প্রকৃতিকে ঢেকে যেতে দেখি আবার কখনো গাঁড় কুয়াশায় চারদিক একদম অস্পষ্ট হয়ে যেতে দেখি।
কিন্তু কি এই কুয়াশা? কেন কুয়াশা পড়ে? আর কেনই বা এটি শুধু শীতের দিনে দেখা যায়- নাকি সারা বছরই কুয়াশা পড়ে? আজকে আমরা দেখব কুয়াশা নিয়ে এরকম কিছু চমৎকার প্রশ্নের উত্তর।
কুয়াশা কিভাবে তৈরি হয়?
আমরা জানি শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা খুবই কম থাকে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু স্তর শীতল থাকে এবং বায়ুতে মিশে থাকা জলীয়বাষ্প ধীরে ধীরে ঘনীভূত হতে থাকে, ঠিক যেমনটা করে মেঘ তৈরি হয়। ঘনীভূত জলীয় বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলে থাকা ধূলিকণার সাথে মিশে ঘনীভূত জলীয়বাষ্প খুব সহজেই কুয়াশা তৈরি হতে পারে।
কুয়াশা তৈরির পেছনে বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার পার্থক্য দায়ী থাকে। ভূ-পৃষ্ঠ রাতে দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হয়ে পড়লে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু স্তর ঠাণ্ডা ও আর্দ্র হয়। এবং কুয়াশা তৈরির উপযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি করে। তবে, সমুদ্রের উপকূল-ভাগে, উষ্ণতর বায়ু, শীতল সমুদ্রের পনির সংস্পর্শে আসলেও কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
আবার আমরা জানি, পানি তিন অবস্থায় থাকতে পারে- কঠিন, তরল, বায়বীয়। শীতকালে বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প ঠাণ্ডায় জমে বিন্দু বিন্দু পানির আকার ধারণ করে। এই পানির অণুগুলো জলীয় বাষ্পের চেয়ে ভারী হওয়ায় নিচে নেমে আসে যাকে আমরা কুয়াশা বলে থাকি।
কুয়াশার সাথে তুষার পাতের সম্পর্ক
শীত প্রধান দেশগুলোতে তাপমাত্রা অনেক কম হয়ে থাকে। এতটাই কম যে বায়ুমণ্ডলে থাকা জলীয়বাষ্প পানি কণায় পরিণত না হয়ে জমে গিয়ে বরফ কণায় পরিণত হয়। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় পানির অণুগুলো আরও ঘনীভূত হয়ে যায়। তখন ছোট ছোট বরফের কুচি সৃষ্টি করে। যাকে বালা হয় তুষার।
মেঘ আর কুয়াশা কি আলাদা?
মেঘ আর কুয়াশা দুটি আলাদা মনে হলেও, এদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা, শিশির এদেরকে আমরা আলাদা হিসেবে চিনলেও এরা আসলে একই জিনিস। এদের যেকোনো একটার ব্যাপারে জেনে গেলে সবগুলো সম্পর্কে জানা হয়ে যায়। আবহাওয়া-বিদগণ এই জিনিসটাকে বলেন Precipitation, বাংলায় এর পরিভাষা হতে পারে বারিপাত। এই প্রেসিপিটেশনের কয়েকটা প্রকারভেদের মাঝে একটা হচ্ছে মেঘ এবং আরেকটা কুয়াশা।
সাধারণত কুয়াশা হল ভূমির সংস্পর্শে থাকা মেঘমালা। মেঘকেও আংশিকভাবে কুয়াশা বিবেচনা করা যায়। মেঘের যে অংশটুকু মাটির ওপরে বাতাসে ভাসমান থাকে তা কুয়াশা হিসেবে বিবেচিত নয়। তবে ভূমির উঁচু অংশের সংস্পর্শে থাকা মেঘমালাকে কুয়াশা বলা হয়।
কুয়াশা ও ধোঁয়াশার মধ্যে পার্থক্য
কুয়াশা আর ধোঁয়াশার মধ্যে পার্থক্য হল এদের ঘনত্বে। যা কিনা এদের ফলে সৃষ্ট দর্শনযোগ্যতার হ্রাস দ্বারা হিসাব করা হয়। কুয়াশার কারণে দর্শনযোগ্যতা ১ কি.মি. এর কম হয়, যেখানে ধোঁয়াশা দর্শনযোগ্যতা ২ কি.মি. এর বেশি কমায় না।
যেখানে সবচেয়ে বেশি কুয়াশা পড়ে!
পৃথিবীর সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন স্থান হল নিউফাউন্ডল্যান্ডের গ্র্যান্ড ব্যাংকস। যেখানে উত্তর দিক থেকে আসা শীতল প্রবাহ ও দক্ষিণ দিক থেকে আসা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ গালফ প্রবাহ মিলিত হয়।সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন ভূমি অঞ্চলের মধ্যে আছে পয়েন্ট রেয়স, ক্যালিফোর্নিয়া ও আর্জেন্টিনা, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর।
বছরের ২০০ দিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকে এসব স্থান।এমনকি শরৎ ও গ্রীষ্মের সময়ও উষ্ণ দক্ষিণ ইউরোপের নিম্নভূমি ও উপত্যকা অঞ্চলে ঘন কুয়াশা পড়ে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ
If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.