হ্যালোজেন (Halogen) কি ও কাকে বলে? হ্যালোজেন এর উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

হ্যালোজেন

রসায়নবিজ্ঞানে একটি পরিচিত নাম হ্যালোজেন। বিভিন্ন লবণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই হ্যালোজেন মৌলগুলো মূলত সমুদ্রে এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক পদার্থে পাওয়া যায়। আজকের লেখায় আমরা দেখব কি এই হ্যালোজেন সমূহ, এদের বৈশিষ্ট্য, নামকরণ ও ব্যবহার।

হ্যালোজেন কাকে বলে?

পর্যায় সারণির গ্রপ-১৭ তে অবস্থিত মৌল ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), ব্রোমিন (Br), আয়োডিন (I), এবং অ্যাস্টাটিন (At) এই ৫টি মৌলকে একত্রে হ্যালোজেন (Halogen) বলে।


হ্যালোজেন এর নামকরণ

ইংরেজি Halogen শব্দের অর্থ হল 'লবণ গঠনকারী'। যেহেতু সমুদ্রের পানিকে বাষ্পীভূত করে যে সামুদ্রিক লবণ পাওয়া যায় তার মধ্যে প্রধানত ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিনজাত লবণ থাকে। এজন্যই এদের নামকরণ একসাথে করা হয়েছে হ্যালোজেন।


হ্যালোজেনের সক্রিয়তার ক্রম

গ্রুপ ১৭-তে যত উপর থেকে নিচে যাওয়া যায় হ্যালোজেন সমূহের সক্রিয়তা কমতে থাকে৷ গ্রপটির প্রথম মৌল হল ফ্লোরিন, তাই ফ্লোরিনের সক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। হ্যালোজেন সমূহের সক্রিয়তার ক্রমটি হল: ফ্লোরিন (F) > ক্লোরিন (Cl) > ব্রোমিন (Br) > আয়োডিন (I)। অর্থ্যাৎ, সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ফ্লোরিন এবং সবচেয়ে কম সক্রিয় আয়োডিন।


হ্যালোজেন এর বৈশিষ্ট্য

• হ্যালোজেনসমূহের মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ।

• এরা বহিঃস্থ কক্ষপথে 1টি ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে হ্যালাইড আয়ন তৈরি করে।

• এরা নিজে নিজেই ইলেকট্রন ভাগাভাগির মাধ্যমে দ্বি-মৌল অণু তৈরি করে।

• পর্যায় সারণির সর্বডানে এদের অবস্থান হওয়ায় ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা সর্বোচ্চ হয়।

• এরা ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে ধাতব হ্যালাইড গঠন করে।

• হ্যালোজেন গুলির নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস অপেক্ষা একটি ইলেকট্রন কম থাকে।

• এর জারণ সংখ্যা -1 হয়।

• হ্যালোজেন গুলি অধাতু হওয়ায় এদের অক্সাইড অম্লীয় প্রকৃতির।

• এরা গ্রুপ ১৭ এর মৌল।

• এদের পারমাণবিক আকার পর্যায়ক্রমে বাড়ে।

• এদের গলনাংক গ্রুপ১ এর ধাতুগুলোর চেয়ে কম।

• এদের স্ফুটনাংক গ্রুপ১ এর ধাতুগুলোর চেয়ে কম।

• এদের গলনাংক,স্ফটনাংক,ঘনত্ব পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ে।

• এদের আয়নিকরণ শক্তি বেশি।

• মৌলসমূহের রাসায়নিক ধর্ম এর পরমাণুর বহিঃস্তরের ইলেক্ট্রন কাঠামো দ্বারাই নির্ণীত ও নিয়ন্ত্রিত হয় মৌলের আণবিক সংখ্যা যত বেশী হয় হ্যালোজেনের সক্রিয়তা হ্রাস পায় এবং গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়।

• পরমাণুর আকার যত ছোট হয় তড়িৎ ঋণাত্বকতার মান তত বেশি।

• পরমাণুর সর্ববহিস্থ স্তরে সাতটি ইলেকট্রন থাকায় নিকষ্টস্থ নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ন্যায় অষ্টক পূর্ণতার জন্যে একটি ইলেকট্রন প্রয়োজন বলে সব হ্যালোজেনের সাধারণ যোজনী এক।

• হ্যালোজেনসমূহ অধাতু শ্রেণীর মৌলিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে দুটি পরমাণু রয়েছে।


হ্যালোজেন এর ব্যবহার

১। ব্রোমিন এবং ক্লোরিন জীবাণুনাশক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

২। হ্যালোজেন বাতিতে অল্প পরিমাণে হ্যালোজেন, যেমন আয়োডিন বা ব্রোমিন পাওয়া যায়।

৩। টুথপেষ্ট তৈরিতে ফ্লোরাইড ব্যবহার করা হয়।

৪। এস্টাটিন ব্যতিত সকল হ্যালোজেন অগ্নি নির্বাপক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

৫। ফ্রিজ, এসি তৈরিতে হ্যালোজেন ব্যবহৃত হয়।

৬। ফটোগ্রাফিক প্লেটে ব্রোমিন যৌগ ব্যবহৃত হয়।

৭। থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসায় এস্টাটিন ব্যবহৃত হয়।

৮। ইন্সেক্টিভ স্প্রে তৈরিতে হ্যালোজেন ব্যবহৃত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ