মহাবিশ্ব নিয়ে ১১ টি চমকপ্রদ তথ্য । 11 Space Facts

মহাবিশ্ব নিয়ে ১১ টি চমকপ্রদ তথ্য । 11 Space Facts
Image source: wamc | Creator: Emrah Turudu 

১। মহাবিশ্বে এমন একটি গ্রহের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন যেটি কিনা হীরার তৈরি। চমৎকার এই গ্রহটি কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতেই অবস্থিত। Super Earth ধরনের এই গ্রহটি ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হয়। বৈজ্ঞানিক ভাবে গ্রহটি 55 Cancri E নামে পরিচিত এবং পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ভরে পৃথিবীর ৮.৬৩ গুন। মাত্র ১৮ ঘণ্টায় এটি এর অক্ষের চারদিকে পরিভ্রমণ করে। তবে এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪,৯০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ২,৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা কিনা পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি।

মূলত গ্রহটি তৈরি কার্বনের দুটি রূপভেদ হীরা ও গ্রাফাইট দিয়ে। গ্রহটির ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাটি হীরার তৈরি। ফলে গ্রহটি এতটাই উজ্জ্বল যে নক্ষত্রমণ্ডলে খুব সহজেই এটি চোখে পরে।

২। অলিম্পাস মনস হল সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি। ভাবতে পারেন যে এটি আবার কোথায় অবস্থিত। না, এটি পৃথিবী তে অবস্থিত কোন আগ্নেয়গিরি নয়। অলিম্পাস মনস অবস্থিত মঙ্গল গ্রহে। ধারণা করা হয় এই আগ্নেয়গিরি টি এখনো জীবন্ত। এটি প্রায় ৭০০ কিলোমিটার প্রসস্থ এবং এর উচ্চতা ২১ কিলোমিটার যা কিনা মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে ৩ গুন বেশি উঁচু। মূলত অলিম্পাস মনস হলো আগ্নেয়গিরি থেকে উদগীরন হওয়া উচ্চতাপ বিশিষ্ট বহু তরল পদার্থ (Basaltic Lava) এর ফল যা ধীরে ধীরে জমায়েত হয়ে এর উচ্চতা বৃদ্ধি করেছে।

৩। মহাশূন্যে একই ধরনের দুটি ধাতুর টুকরা পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে তারা পরস্পরের সাথে স্থায়ী ভাবে বন্ধন গঠন করে যুক্ত হয়ে যাবে। যে কোন ধাতুর টুকরাই এই ধর্ম প্রদর্শন করে থাকে। মহাশূন্যে ধাতুর এই বিশেষ ধর্ম কে বলা হয় Cold Welding। চমৎকার এই ধর্মের কারনেই যখনই দুটি একই ধরনের ধাতব টুকরা পরস্পরের সংস্পর্শে আসবে তখনই পরস্পরের সাথে একীভূত হয়ে যাবে।

Cold Welding হল কঠিন পদার্থের এমন একটি ধর্ম যার কারণে কোন বায়ুশূন্য স্থানে দুটি একই জাতের মসৃণ ও পরিষ্কার ধাতব পৃষ্ঠ পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। যেহেতু মহাশূন্য সম্পূর্ণই বায়ুশূন্য, তাই এই ঘটনাটি ঘটে থাকে। পৃথিবীতে এমনটা কখনো হয় না। কারণ এখানে সর্বত্র বায়ুর অণু উপস্থিত। যার ফলে দুটি ধাতব টুকরা পরস্পরের সংস্পর্শে আসলেও এদের মাঝে বায়ুর অণু থেকে যায়। তবে কোন বায়ুশূন্য পরিবেশ তৈরি করে এই পরীক্ষাটি করলে তা অবশ্যই Cold Welding ধর্ম প্রদর্শন করবে।

Watch the Video- 


৪। মহাশূন্য সম্পূর্ণই নিস্তব্ধ। আমরা জানি শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হতে হলে মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। মাধ্যম ব্যতীত শব্দ চলাচল করতে পারে না। মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের মাধ্যমে শব্দ এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমন করে। অন্যদিকে মহাশূন্য একটি আদর্শ শূন্যস্থান। এখানে না আছে কোন বায়ুমণ্ডল, না আছে অন্য কোন পদার্থ। ফলে মহাশূন্যে উৎপন্ন কোন শব্দ এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে পারে না। এমনকি চাঁদের মত অন্য কোন উপগ্রহ বা গ্রহ যাদের কোন বায়ুমণ্ডল নেই সেসকল গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠে গিয়ে যদি আপনি কথা বলেন তাহলে আপনার সহচারী আপনার কোন কথাই শুনতে পাবে না।

এই সমস্যা সমাধানে নভোচারীরা মহাকাশে রেডিও কমুনিকেশন প্রযুক্তি ব্যাবহার করে থাকেন। রেডিও তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোন মাধ্যম ছাড়াই যেতে পারে। ফলে নভোচারীরা খুব সহজেই রেডিও সিগনাল ব্যাবহার করে খুব সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।

৫। শুক্র গ্রহে এক দিন পৃথিবীর প্রায় ২৪৩ দিন। হ্যাঁ, যে সময়ে শুক্র গ্রহে মাত্র একদিন অতিবাহিত হয়, পৃথিবীতে ততক্ষণে পার হয়ে যাবে ২৪৩ দিন। কিন্তু গ্রহটি সূর্যের খুব নিকটে অবস্থিত হওয়ায় সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসতে এর খুব কম সময় লাগে। মজার ব্যাপার হল মাত্র ২২৫ দিনেই এই গ্রহটি সূর্যের চারদিকে একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করতে পারে। যার মানে দাঁড়াচ্ছে শুক্র গ্রহের এক বছর মাত্র ২২৫ দিন যা কিনা এর একটি দিনের সময়ের চেয়েও কম।

৬। সুদূর ভবিষ্যতে 'মিল্কিওয়ে' এবং 'এন্ড্রোমিডা' গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি সর্পিলাকার প্রতিবেশী। বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সিটিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে এটি ক্রমান্বয়ে আমাদের গ্যালাক্সির দিকে এগিয়ে আসছে। তবে যে গতিবেগে এগিয়ে আসছে তা নিছক কম নয়। প্রতি সেকেন্ডে ১১০ কিলোমিটার বেগে এটি আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হল গ্যালাক্সি টি এই বেগেও যদি আসতে থাকে, আমাদের নিকটে পৌঁছাতে এর সময় লাগবে ৪ বিলিয়ন বছর। এত সময় পরে হয়তো পৃথিবীর অস্তিত্বও থাকবে না। তবে চমৎকার যে ব্যাপার টি ঘটবে তা হল দুটি গ্যালাক্সি পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গঠন করবে নতুন এক অতি বৃহৎ উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি।

৭। আমাদের অবজার্ভেবল ইউনিভার্সে ১২৫ বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। অবজার্ভেবল ইউনিভার্স বলতে বোঝানো হয় মহাবিশ্বের যতটুকু মানব সভ্যতার কাছে দৃশ্যমান, বিশেষ করে বললে হাবল টেলিস্কোপের কাছে। হাবল টেলিস্কোপের মতে দৃশ্যমান মহাবিশ্বে ১২৫-২০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। হাবল টেলিস্কোপের তথ্যমতে এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বে বসবাসযোগ্য গ্রহ বা প্ল্যানেট থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কাজেই এলিয়েন বা ভিন গ্রহ-বাসী প্রাণের অস্তিত্ব একদম এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

৮। আমাদের সৌরজগতের বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় কোন নিকটবর্তী নক্ষত্রের বিস্ফোরণে সৃষ্ট মহাজাগতিক ধূলিকণা থেকে আমাদের এই সৌরজগত সৃষ্টি হয়েছে। মহাজাগতিক ধূলিকণার এই বিশাল মেঘ একটি বিশাল নেবুলা বা নীহারিকা গঠন করে। নীহারিকাটির অভিকর্ষ বল এর কেন্দ্রের দিকে বেশি বেশি মহাজাগতিক ধূলিকণা জমা করতে থাকে। ফলে কেন্দ্রে ধীরে ধীরে হিলিয়ামের মত গ্যাস এর উৎপত্তি হতে থাকে এবং আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র সূর্য গঠন করে।

যেসকল বস্তু নীহারিকার কেন্দ্রের বাইরের দিকে ছিল তারা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে একত্রিত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ তৈরি করে।

৯। আমাদের সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯.৮৬% ভরই হল সূর্যের ভর। বলা যেতে পারে যে আমাদের সূর্য হল একটি দৈত্যাকার গ্যাস বল যা ৯১% হাইড্রোজেন ও ৯% হিলিয়াম নিয়ে গঠিত এবং প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন গ্যাস এর নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। এই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে শক্তি যার খুবই সামান্য অংশ তাপ ও আলো আকারে আমরা পৃথিবীতে পেয়ে থাকি। এই নক্ষত্রটি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের চেয়ে এতটাই বড় যে এর ভর সৌরজগতের সমস্ত ভরের ৯৯.৮৬%। এর ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ১০৯ গুন এবং প্রায় ১ মিলিয়ন পৃথিবী খুব সহজেই এর মধ্যে এঁটে যাবে।

১০। নিউট্রন তারকারা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে পারে। নিউট্রন তারকারা মূলত ১০-২৫ সূর্যভরের নক্ষত্রের মৃত্যুর ফলে সৃষ্টি হয়। পরিচিত মহাবিশ্বের তারকার মধ্যে নিউট্রন তারকারাই সবচেয়ে ছোট, কিন্তু ঘনত্বের দিক দিয়ে সর্বাধিক। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে খুব অল্প পরিসরে অনেক বেশি ভর। আর এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই এ ধরনের নক্ষত্র গুলো প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ বার পর্যন্ত ঘুরতে পারে।

১১। মহাশূন্যে ভাসমান পানির অস্তিত্ব রয়েছে। পৃথিবী থেকে ১২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এমনই এক পানিবাস্প মেঘের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রহ বা উপগ্রহে জমাট পানি বা পানিবাস্পের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এটি সম্পূর্ণ আলাদা। বিশাল এই পানিবাস্পের মেঘ সম্পূর্ণই মহাবিশ্বে ভাসমান। ধারণা করা এখানে পৃথিবীর চেয়ে ১৪০ ট্রিলিয়ন গুন বেশি পানি রয়েছে যা কি না সম্ভবত এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন পানির সংগ্রহ।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.