মানুষের মুখের লালা কি কি কাজে লাগে? এর উপকারিতা কি?

মানুষের মুখের লালা কি কি কাজে লাগে? এর উপকারিতা কি?
Image by Wislife

মানুষের মুখের লালা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিন আমাদের মুখে প্রায় ১.৫ লিটার লালা উৎপন্ন হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে আমরা অনেকে এটিকে শুধু মুখ ভিজিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে মনে করে থাকি। কিন্তু এ ছাড়াও লালার রয়েছে নানাবিধ উপকার এবং কাজ।


লালা বা থুতু কি?

লালা একটি আঠালো এবং বর্ণহীন তরল। এটি আমাদের কাছে মূলত থুতু হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের মুখের লালা গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। আমাদের মুখে দু পাশে তিন জোড়া বড় লালাগ্রন্থি বা Saliva Gland রয়েছে। এছাড়াও ছোট ছোট আরও কিছু লালা গ্রন্থি রয়েছে আমাদের মুখে। এসকল লালাগ্রন্থি থেকে প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় লালা উৎপন্ন হয়ে থাকে।

মানুষের লালায় থাকে প্রায় ৯৮% পানি, শ্বেত রক্তকণিকা, মিউকাস, এপিথেলিয়াল কোষ, বিভিন্ন এনজাইম এবং এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো নিয়ে মানুষের লালা গঠিত।


লালা বা থুতুর উপকারিতা এবং কাজ 

লালা নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু কাজ হল-

১। লালা খাবার পিচ্ছিল করে

আমাদের পরিপাকতন্ত্রের একটি অপরিহার্য উপাদান। আমরা প্রথমে যখন কোন খাবার খাওয়ার জন্য মুখে দেই তখন সর্বপ্রথম লালা এই খাবারের সাথে মিশ্রিত হয়ে একে পিচ্ছিল করে তোলে। যার ফলে আমরা খুব সহজে খাবার চিবিয়ে গিলতে পারি। লালা না থাকলে খাবার পিচ্ছিল হত না এবং আমরা অনায়াসে খাবার গিলতে পারতাম না।


২। লালা খাদ্যকে নরম করে

আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। এসব খাবারের মধ্যে যেমন নরম বা তরল জাতীয় খাবার আছে তেমনি কিছু খাবার আছে যেগুলো শক্ত এবং শুষ্ক। এসব খাবার খাওয়ার সময় লালা খাবারের সাথে মিশে খাবার কে নরম করে তোলে যা পরবর্তীতে খাবার হজম করতে সহায়তা করে।


৩। লালা জীবাণু ধ্বংস করে

লালার জীবাণু-প্রতিরোধী ক্ষমতা আছে। মুখের ভেতরকার জীবাণুকে মেরে ফেলতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে আমাদের মুখে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ার সময় খাবারের সাথে অসংখ্য জীবাণু আমাদের মুখে প্রবেশ করে থাকে যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু খাদ্য চর্বণের সময় খাবারের সাথে লালা মিশ্রিত হয়ে অধিকাংশ জীবাণু ধ্বংস করে আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।


৪। লালা আমাদের মুখে এসিডের সমতা রক্ষা করে

আমাদের মুখে এবং পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন এনজাইম কে সক্রিয় রাখতে হলে এসিডের সমতা থাকতে হয়। লালা আমাদের মুখে এসিডের সমতা রক্ষা করে থাকে ফলে আমাদের মুখে এনজাইমগুলো সক্রিয় থাকতে পারে।


৫। লালা শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবার কে হজমপোযোগী করে তোলে

আমরা যে সকল খাবার খেয়ে থাকি তার মধ্যে বেশির ভাগ খাবার হল শর্করা এবং চর্বি জাতীয়। তবে এজাতীয় খাবার খুব দ্রুত হজম হতে চায় না এবং এদেরকে জটিল খাদ্য উপাদান বা Complex Food বলে। খাওয়ার সময় এসকল খাবারের সাথে মিশ্রিত লালা এই জটিল খাদ্য উপাদান গুলো ভেঙে সরল খাদ্য উপাদানে পরিণত করে। ফলে শর্করা বা চর্বি জাতীয় জটিল খাবারগুলো হজম উপযোগী হয়ে ওঠে।


৬। লালা ব্যাকটেরিয়া ক্ষয় থেকে দাঁত কে রক্ষা করে

লালায় থাকা বিভিন্ন এনজাইম দাঁতের ক্রেইভাসের মধ্যে আবদ্ধ খাদ্য কণাগুলি ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এতে করে দাঁত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। দাঁতকে ধৌতকরণ, মুখের মধ্যকার জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, মুখ পরিষ্কার, মুখের মধ্যকার বিব্রতকর গন্ধ নিয়ন্ত্রণসহ দাঁতকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে।


৭। লালা মুখের অভ্যন্তরে নরম অংশ কে রক্ষা করে

মুখের মধ্যকার নরম অংশকে খাবারের ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে, লালা নিঃসরণ কমে গেলে মুখে নানা ধরনের জ্বালাপোড়া ও কষ্ট শুরু হয়।


৮। লালা খাবার হজমে সাহায্য করে

লালাতে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম থাকে। এদের মধ্যে এমাইলেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমাইলেজ এনজাইমটি লালায় থাকার কারণে খাদ্যের হজম প্রক্রিয়া আমাদের মুখে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এমাইলেজ ম্যাল্টোজ, স্টার্চ এবং ডেক্সট্রোস এর মত বৃহৎ ও জটিল খাদ্য উপাদান কে ভেঙে ছোট ও সরল অণুতে পরিণত করে যা হজমের জন্য প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করে দেয়।


৯। লালায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ থাকায় তা দাঁতের এনামেল কে সুরক্ষিত রাখে।

লালাতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফ্লোরাইড সহ আরও কিছু খনিজ থাকে। এসকল খনিজ পদার্থ দাঁতের এনামেল পুনর্গঠন করে এবং দাঁতকে শক্ত, মজবুত করে কাভিটি থেকে রক্ষা করে।

কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ