গণিতের সূত্র | পর্বঃ ৮ | সেট অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা ও সূত্র

গণিতের সূত্র | পর্বঃ ৮ | সেট অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা ও সূত্র
গণিতের সূত্র | পর্বঃ ৮ | সেট অধায়ের প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা ও সূত্র

গণিতের সূত্র নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক পর্বের এ পর্বে থাকছে সেট অধ্যায়ের সূত্রসমূহ।


সেটের প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা ও সূত্র

সেট হচ্ছে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত বস্তুসমূহের সমাহার বা তালিকা। সেটের অন্তর্গত প্রত্যেক বস্তুকে ঐ সেটের উপাদান (element) বা সদস্য (member) বলা হয় ।

সাধারণত সেট দুই পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয় :

i. তালিকা পদ্ধতি (Tabular Method) : যেমন A ={1,2,3,4,5}

ii. সেট গঠন পদ্ধতি (Set Builder Method) : যেমন
= {x ∣ x ∈ N এবং x ≤ 5}

১। সমান সেট: যেকোন সেট A=B হবে যদি A সেটের সকল সদস্য B সেটের সদস্য হয় এবং B সেটের সকল সদস্য A সেটের সদস্য হয় ।

অর্থাৎ,
A=B হবে যদি এবং কেবল যদি হলে x ∈ B হয় এবং x ∈ B হলে x ∈ A হয় ।

২। ফাঁকা সেট/ শূণ্য সেট: যে সেটের কোন সদস্য নেই তাকে ফাঁকা বা শূণ্য (Empty) সেট বলা হয় । শূণ্য সেটকে সংকেত দ্বারা
প্রকাশ করা হয় ।

৩। উপসেট: যদি A সেটের প্রতিটি উপাদান B সেটেরও উপাদান হয় তবে A কে সেটের B উপসেট (Subset) বলা হয় । এবং A ⊂ B লিখে তা প্রকাশ করা হয় । উপসেট বোঝাতে ⊆ চিহ্নও ব্যবহার করা হয় । A ⊆ B হয় যদি ও কেবল যদি x ∈ A হলে x ∈ B হয় । কোন সেটের সদস্য সংখ্যা n হলে ঐ সেটের জন্য 2 n সংখ্যক উপসেট পাওয়া যাবে । 

৪। প্রকৃত উপসেট: সেট A কে B এর প্রকৃত উপসেট (Proper Subset) বলা হয় যদি A ⊂ B এবং A ≠ B হয় । A, B এর প্রকৃত উপসেট বোঝাতে A ⊊ B লেখা হয় । কোন সেটের সদস্য সংখ্যা n হলে ঐ সেটের জন্য (2^n -1) সংখ্যক প্রকৃত উপসেট
পাওয়া যাবে ।

৫। শক্তি সেট: কোন সেটের উপসেটসমূহের সেটকে ঐ সেটের শক্তি সেট (Power set) বলে । কোন সেট A এর পাওয়ার সেটকে P(A) দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।

৬। সার্বিক সেট: আলোচনাধীন সকল সেটকে তথা তাদের উপাদানসমূহকে একটি বিশেষ সেটের অন্তর্ভূক্ত বিবেচনা করা হয়। সেই বিশেষ সেটকে ঐ আলোচনার সার্বিক সেট (Universal
Set) বলা হয় এবং সাধারণত ⋃ প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।

৭। ব্যবধি: a ও b বাস্তব সংখ্যা এবং a<b হলে এর চারটি বিশেষ ধরনের উপসেটকে a ও b প্রান্তবিশিষ্ট ব্যবধি (Interval) বলা হয়। দ্রষ্টব্য, সকল বাস্তব সংখ্যার সেটকে R দ্বারা সূচিত করা হয় ।

i. a থেকে b পর্যন্ত খোলা (Open) ব্যবধি : ]a,b[ = (a,b) = {x∣x ∈ R এবং a<x<b}

ii. a থেকে b পর্যন্ত বদ্ধ (Closed) ব্যবধি : [a,b] =
{x∣x ∈ R এবং a≤x≤b}

iii. a থেকে b পর্যন্ত খোলা-বদ্ধ ব্যবধি : ]a,b] = (a,b] 

= {x∣x ∈ R এবং a<x≤b}

iv. a থেকে b পর্যন্ত বদ্ধ-খোলা ব্যবধি : [a,b[ = [a,b) 

= {x∣x ∈ R এবং a≤x<b}

৮। সংযোগ সেট: দুটি সেট A এবং B এর সকল উপাদান নিয়ে (কোন উপাদানের পুনরাবৃত্তি না করে) গঠিত সেটকে A এবং B এর সংযোগ সেট বলা হয় । 

৯। ছেদ সেট: দুটি সেট A এবং B এর সকল সাধারণ (Common) উপাদান নিয়ে গঠিত সেটকে A এবং B এর ছেদ সেট বলা হয় । যা A⋂B লিখে প্রকাশ করা হয় । 

১০। নিশ্ছেদ সেট: দুটি সেট A এবং B নিশ্ছেদ সেট বা সংক্ষেপে নিশ্ছেদ বলা হয় যদি A এবং B এর মধ্যে কোন সাধারণ উপাদান বিদ্যমান না থাকে । অর্থাৎ, A⋂B = ϕ যদি হয় ।

১১। অন্তর সেট: A এবং B দুটি সেট হলে, যে সমস্ত উপাদান A সেটে আছে কিন্তু B সেটে নেই, এরূপ উপাদান নিয়ে গঠিত সেটকে A এবং B এর অন্তর সেট (Differecne Set) বলে । A এবং B এর অন্তর সেটকে A-B বা A\B নিয়ে প্রকাশ করা হয় ।

একইভাবে, B সেটে আছে কিন্তু A সেটে নেই এরূপ উপাদান নিয়ে গঠিত সেটকে B এবং A এর অন্তর সেট বলে । B এবং A এর অন্তর সেটকে B-A বা B\A লিখে প্রকাশ করা হয় ।

২। পূরক সেট: কোন সেটের উপাদানগুলোকে বাদ দিয়ে সার্বিক সেটের অন্যান্য সমস্ত উপাদান নিয়ে গঠিত সেটকে উক্ত সেটের পূরক সেট বলে । A কোন সেট হলে A এর পূরক(Complement) সেটকে A′ প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয় । অর্থাৎ, A′ = U-A 

১৩। ক্রমজোড়: দুটি সংখ্যার ক্রমজোড়ে (Ordered Pair) একটি সংখ্যাকে প্রথম এবং অপরটিকে দ্বিতীয় উপাদান ধরা হয় । (a,b) দ্বারা একটি ক্রমজোড় নির্দেশ করা হয় যার প্রথম পদ a এবং দ্বিতীয় পদ b। ক্রমজোড় (a,b) ও (c,d) সমান হয় অর্থাৎ, (a,b) = (c,d) হয় যদি ও কেবল যদি a=c এবং b=d হয় ।

১৪। কার্তেসীয় গুণজ সেট: যদি A এবং B দুটি সেট হয়, তবে A এর উপাদানগুলোকে প্রথম পদ ও B এর উপাদানগুলোকে দ্বিতীয় পদ ধরে গঠিত ক্রমজোড়ের সেটকে A এবং B এর কার্তেসীয় গুণজ (Cartesian Product) সেট বলে । যা A×B প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয় । অর্থাৎ,

A×B = {(x,y): x ∈ A এবং y ∈ B}
A×B = {(x,y): x ∈ B এবং y ∈ A}

এবং সাধারণভাবে, A×B ≠ B×A

১৫। ভেনচিত্র: কোন সেটের একাধিক উপসেটের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করতে অনেক সময় জ্যামিতিক চিত্র ব্যবহার করা হয় । বৃটিশ তর্কশাস্ত্রবিদ জন ভেন প্রথমে এরূপ চিত্র ব্যবহার করেন বলে তার নামানুসারে এগুলোকে ভেনচিত্র (Venn Diagram) বলা হয়। ভেনচিত্রে সার্বিক সেটকে সাধারণত আয়তক্ষেত্র এবং সংশ্লিষ্ট সেটগুলোকে বৃত্ত দ্বারা প্রকাশ করা হয় । 


সেটের সূত্রঃ

১। বিনিময় বিধিঃ A⋃B = B⋃A 

এবং AB = BA 

২। সেটের সংযোগ বিধি (Associative Law): A,B,C যেকোন তিনটি সেট হলে,

i. (A⋃B)⋃C = A⋃(B⋃C)

ii. (A⋂B)⋂C = A⋂(B⋂C)

৩। সেটের বণ্টন বিধি (Distributive Law): A,B,C যেকোন তিনটি সেট হলে,

i. A⋃(B⋂C) = (A⋃B)⋂(A⋃C)
ii. A⋂(B⋃C) = (A⋂B)⋃(A⋂C)

৪। অভেদক বিধি (Identity Law): A যেকোন সেট এবং U সার্বিক সেট হলে,

i. A⋃ϕ = A
ii. A⋂U = A
iii. A⋃U = U
iv. A⋂ϕ = ϕ

৫। পূরক বিধি (Complement Law): U সার্বিক সেট, A যেকোন একটি সেট এবং ϕ ফাঁকা সেট এবং U′, A′ এবং ϕ′ যথাক্রমে তাদের পূরক সেট হলে,

i. A⋃A′ = U
ii. A⋂A′ = ϕ
iii. (A′)′ = A
iv. U′ = ϕ
v. ϕ′ = U

৬। দ্য মরগানের বিধি (De Morgan’s Law) : A,B যেকোন দুইটি সেট এবং A′ ও B′ তাদের পূরক সেট হলে,

i. (A⋃B)′ = A′⋂B′
ii. (A⋂B)′ = A′⋃B′

৭। A সান্ত (finite) সেট হলে, A এর উপাদান সংখ্যা আমরা
n(A) দিয়ে প্রকাশ করি । A এবং B দুইটি সান্ত সেট ফলে A⋃B ও একটি সান্ত সেট । সুতরাং 

a. n(A⋃B) = n(A)+n(B)-n(A⋂B)

b. n(A⋃B)′ = n(S)-n(A⋃B) = n(S)-n(A)-n(B)+n(A⋂B)

৮. A,B,C সান্ত সেট ফলে, n(A⋃B⋃C) = n(A)+n(B)+n(C)-n(A⋂B)-n(B⋂C)-n(C⋂A)+n(A⋂B⋂C)

গণিতের সকল সূত্র দেখুন এখানে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.