![]() |
ছবি: নাসা |
মহাবিশ্ব সবসময়ই আমাদের বিস্ময়ে ভরিয়ে রাখে। তারার আলো, গ্রহের কক্ষপথ কিংবা ছায়াপথের বিস্তার – এসবের মাঝেও কিছু জিনিস বৈজ্ঞানিকদের চিন্তায় ফেলেছে। এমনই এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক রহস্যের নাম Tabby’s Star, যার আনুষ্ঠানিক নাম KIC 8462852। এই তারা “Boyajian’s Star” নামেও পরিচিত, নামটি এসেছে জ্যোতির্বিদ Tabetha Boyajian-এর নাম অনুসারে, যিনি প্রথম এই তারাটির অদ্ভুত আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
🔭 তারাটির অবস্থান ও পরিচয়
Tabby’s Star অবস্থিত Cygnus (রাজহাঁস) নক্ষত্রমণ্ডলে, পৃথিবী থেকে প্রায় ১,৪৭০ আলোকবর্ষ দূরে। এই তারাটিকে প্রথম বিশদভাবে নজরে আনা হয় NASA-র Kepler মহাকাশ দূরবীক্ষণ এর মাধ্যমে, যার মূল লক্ষ্য ছিল অন্যান্য গ্রহ খোঁজা। তবে Tabby’s Star সেই লক্ষ্যের বাইরেও এক নতুন ধরণের রহস্য তৈরি করে দেয়।
🌑 আলো হঠাৎ কমে যাওয়া – রহস্যের সূচনা
Kepler-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, Tabby’s Star-এর আলো হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, কখনও ৫%, কখনও ২২% পর্যন্ত – যা একটি স্বাভাবিক তারা থেকে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। এমন আচরণ সাধারণত দেখা যায় না, বিশেষ করে কোনো গ্রহ তারার সামনে দিয়ে গেলে এই রকম তীব্র আলো হ্রাস ঘটে না।
🛸 এলিয়েন? নাকি ধূলিকণা?
এই রহস্যময় আচরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তত্ত্ব হাজির করেছেন। সবচেয়ে আলোচিত একটি তত্ত্ব ছিল – “এলিয়েন মেগাস্ট্রাকচার”। অনেকেই মনে করেছিলেন, কোনো উন্নত সভ্যতা হয়তো তারার চারপাশে বিশাল সৌর প্যানেল বা ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করেছে, যা তারা থেকে শক্তি সংগ্রহ করছে। ফলে তার আলো কমে যাচ্ছে!
তবে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায় – এই আলো হ্রাস এলিয়েন নয়, বরং প্রাকৃতিক কোনো কারণেই হচ্ছে।
☄️ ধূলিকণার আবরণ – সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা
পরীক্ষায় দেখা গেছে, তারাটির আলো যখন কমে যায়, তখন নীল রঙের আলো বেশি কমে যায় – যা সাধারণ ধূলিকণার বৈশিষ্ট্য। যদি গ্রহ বা মেগাস্ট্রাকচার হতো, তবে সব রঙ সমানভাবে কমে যেত।
NASA-এর Spitzer ও Swift মহাকাশ টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণে ধারণা করা হয় যে, অনিয়মিত ধূলিকণার মেঘ বা ধ্বংসাবশেষ তারার চারপাশে ঘুরছে এবং মাঝে মাঝে আলো ঢেকে দিচ্ছে। এদের কক্ষপথ হতে পারে প্রায় ৭০০ দিনের মতো দীর্ঘ।
🌌 অন্য সম্ভাবনা
কিছু গবেষক মনে করেন, হয়তো এটি কোনো ধ্বংসপ্রাপ্ত এক্সোমুন (চাঁদ) বা গ্রহের অংশ, যা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে একটি ধূলিকণার বলয়ে রূপ নিয়েছে।
🔍 এখনো চলছে অনুসন্ধান
যদিও ধূলিকণার তত্ত্বটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, Tabby’s Star এখনো গবেষণার মূল আকর্ষণ। ভবিষ্যতের উন্নত টেলিস্কোপ ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হয়তো এই রহস্যকে আরও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
🌠 উপসংহার
Tabby’s Star আমাদের শেখায় যে, মহাকাশের প্রতিটি বিন্দুতে লুকিয়ে থাকতে পারে এক একটি রহস্য। এর আলো কমে যাওয়ার এই অনন্য আচরণ কেবল কল্পনার জগৎ নয়, বরং বাস্তব জ্যোতির্বিজ্ঞানের সামনে রাখা এক পরীক্ষামূলক ধাঁধা। এলিয়েন না হোক, এই তারাটি আমাদের জানার ক্ষুধাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
তথ্য: নাসা
0 মন্তব্যসমূহ
If it seems any informative mistake in the post, you are cordially welcome to suggest fixing it.